
শেষরাতে সব মানুষ গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হয়, সে সময় আল্লাহর খাঁটি প্রেমিক তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। সূর্য উদয়ের কিছুক্ষণ পর সূর্যের কিরণ লাল রং ছেড়ে দিলে সে সময় ইশরাকের নামাজ রয়েছে। সূর্য যখন আকাশে এক-চতুর্থাংশ ওপরে ওঠে ও সূর্যের তাপ প্রখর হয়, তখন থেকে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত চাশ্ত বা দুহার নামাজ আদায় করতে হয়। মাগরিবের নামাজের পর রাত আঁধার হতে শুরু করে। সে সময় আওয়াবিন নামাজ পড়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া কোনো নিয়ামতপ্রাপ্ত হলে শোকরিয়ার নামাজ, কোনো পাপ কাজ করে ফেললে তাওবার নামাজ পড়ার বিধান দেওয়া হয়েছে। বান্দা যখন কোনো বিশেষ প্রয়োজনের সম্মুখীন হয় বা কোনো প্রয়োজন পূরণ হওয়ার ইচ্ছা করে কিংবা অভাব-অনটনে পড়ে, তখন সালাতুল হাজাত পড়তে বলা হয়েছে।
যখন কেউ এমন কোনো কাজ করার ইচ্ছা করে, যার ভালো-মন্দ ও শুভ-অশুভ নিশ্চিত জানা নেই, তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইস্তেখারার নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। এভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। তবে ফরজ নামাজের জন্য বিশেষ পাঁচটি সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ সংখ্যাটি বেছে নেওয়ার কারণ কেউ কেউ এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে ফরজ নামাজ আসলে ৫০ ওয়াক্ত ছিল। মেরাজের রাতে মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে আবেদন করে করে তা কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেন।
অথচ আমরা জানি যে আল্লাহর বিধান পরিবর্তন হয় না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আমার কথার রদবদল হয় না।’ (সুরা : ক্বফ, আয়াত : ২৯) তাই একদিকে আল্লাহর প্রিয় বান্দার আবেদন, অন্যদিকে আল্লাহর অপরিবর্তনীয় বিধান—এ অবস্থায় আল্লাহ ৫০ ওয়াক্তকে পাঁচ ওয়াক্ত করে দিয়ে তাঁর হাবিবের আবেদন কবুল করেছেন। আবার এক ওয়াক্ত নামাজের বিনিময়ে ১০ ওয়াক্তের সওয়াব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তাঁর অপরিবর্তনীয় বিধান বলবৎ রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কোনো নেক কাজ করলে তার ১০ গুণ (প্রতিফল) পাবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬০) তাই কেউ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে ৫০ ওয়াক্ত আদায় করার সওয়াব লাভ করবে। কেউ কেউ বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে মানুষের জীবনে পাঁচটি অবস্থা রয়েছে।
শুয়ে থাকা, বসে থাকা, দাঁড়িয়ে থাকা, ঘুমিয়ে থাকা ও জাগ্রত থাকা। এ পাঁচ অবস্থার বিপরীতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান দেওয়া হয়েছে। আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারণের বিষয়ে কেউ কেউ হজরত আলী (রা.)-কে উদ্ধৃত করে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। হাদিসটি হলো—
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য উদয়ের সময় মুশরিকরা সূর্যের পূজা করে। তাই ফজরের নামাজ পড়ে তাদের বিরোধিতা করতে বলা হয়েছে। দুপুরে সূর্য ঢলে পড়ার পর সব কিছু আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। তাই সে সময় জোহরের নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। আসরের সময় আদম (আ.) জান্নাতে নিষিদ্ধ ফল খেয়েছেন। তাই সে সময় আসরের নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। মাগরিবের সময় আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল করেছেন। তাই সে সময় মাগরিবের নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে বলা হয়েছে। আর এশার নামাজ আগের নবীগণ আদায় করেছেন। তাই এ উম্মতকেও তা আদায় করতে বলা হয়েছে।’ হাদিসটি হজরত আলী (রা.)-কে উদ্ধৃত করে বর্ণনা করা হলেও এর কোনো সনদ বা সত্যতা হাদিসের কিতাবগুলোয় খুঁজে পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারণের হেকমত সম্পর্কে বলা হয় যে সেগুলো বিভিন্ন নবীর আমল ছিল। যেমন—আঁধার রাতে আদম (আ.) দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হন। ফজরের সময় তিনি আলোর ছোঁয়া দেখে শোকরিয়াস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আল্লাহ তাআলা তা এ উম্মতের ওপর অবতীর্ণ করেছেন। জোহরের চার রাকাত হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মারক। নবী হওয়ার আগে সে সময় তিনি আল্লাহর সন্ধান লাভ করেছেন। আসরের চার রাকাত হজরত ইউনুস (আ.)-এর আদর্শ। মাছের পেট থেকে রক্ষা পেয়ে তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করেছেন। মাগরিবের তিন রাকাত হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত। এ সময় তিনি তাঁর হারানো পুত্র ইউসুফ (আ.)-এর সন্ধান পেয়ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন।
এশার সময় ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে মুসা (আ.) চার রাকাত নামাজ আদায় করেছেন। তাই উম্মতে মোহাম্মদির প্রতি এশার বিধান দেওয়া হয়েছে। [সূত্র : মেরি নামাজ, মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস (রহ.)] আমরা মনে করি, ওপরে উল্লিখিত বর্ণনা ইতিহাসনির্ভর। হাদিস থেকে এগুলো প্রমাণ পাওয়া দুষ্কর। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। (সমাপ্ত) লেখক : ইতিহাস গবেষক
0 Comments