ঈদের ছুটিতে বাসায় গিয়েছিলাম।স্বভা বমতো সারাদিন
ফেসবুকেই থাকি।হঠাৎ একদিন আব্বু আর আম্মু
খুবই
সিরিয়াস ভঙ্গিতে সামনে এসে দাড়ালো।
আমি মনে
মনে চিন্তা করছি,আজ বোধহয় কপালে দুঃখ
আছে।
কিন্তু বাবা যা বললো পাচঁ মিনিটের জন্য
পুরো 'থ'
বনে গেলাম।বাবার সাথে কথাগুলো এমন
ছিলো;
: আশিক,তুই কি প্রেম ট্রেম করিস?
: না আব্বু ঐগুলা করার সময় নাই।সারাদিন
পড়াশোনা নিয়া
দৌড়াদৌড়ি করি।
: হয়ছে থাম বুঝেছি।এখন আমার কিছু কথা মন
দিয়ে
শোন।
: হ্যা আব্বা বলো!!
: আমার এক পুরোনো বন্ধু বাহিরে থেকে
ফিরে
এসেছে।কিছুদিন পর আবার ফিরে যাবে।
উনার একটা
মেয়ে আছে তোর থেকে বছর দুই ছোট
হবে।
: এইগুলা কথা আমাকে বলছো কেন??
: ঐ বন্ধুর মেয়ের সাথে সামনের সপ্তাহে
তোর
এনগেজমেন্ট আর কালিমা পড়িয়ে দিবো।
: কিহ!! তোমার মাথা ঠিক আছে তো।
: হ্যা সব ঠিক আছে। জানি তোর বয়স হইনাই
এখনো, কিন্তু মেয়ে আমার অনেক পছন্দ। আর
আমার বন্ধুই বিয়েটা দিতে চায়।আজ কাল
তো
ছেলেমেয়ে বড়ো হলে কি সব উল্টাপাল্টা
কাজ
করে তাই তোর বিয়েটা আগেই দিয়ে দিতে
চাই।
: কিন্তু আব্বা আমার পড়াশোনা, সবাই কি
বলবে।
এইগুলা হাবি জাবি বিয়ে আমি করতে
পারবো না।
: আরে মেয়েকে তোর উঠিয়ে আনবো না।
মেয়ে ঐখানেই থাকবে।আর বিয়ে হবে এইটা
আমার সিদ্ধান্ত।তোকে জোর করে হলেও
বিয়ে দেবো।
তার পর আর কোন কথা বলার সাহস হয়নি।
আমি ছোট
বেলা থেকেই বিয়ে পাগল অতএব আমার খুশী
হওয়ার কথা। কিন্তু যখন বাস্তবে এমন হচ্ছে
তখন
কেমন জানি ভয় লাগছে।
আসলে মেয়েটা সম্পর্কে আমি কিচ্ছু জানি
না।
এমনকি বাবা মেয়েটার ছবি পর্যন্ত দেখতে
দেয়নি।আর আমি দেখেছি বাবার পছন্দ
একদম
ভালো না।এই সাত পাচঁ ভাবতে ভাবতে এক
সপ্তাহ
শেষ।
শুক্রবার সকালে হঠাৎ বাবা ঘরে আসলো।ঘুম
থেকে ডেকে তুলে একটা লাল পাঞ্জাবি
আর
পায়জামা ধরিয়ে দিলো।
; কিরে ঘুম ভাঙ্গেনি এখনো? সকাল ১০ টা
বাজে।
যাহ গোসল করে পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে
যা।
: কেন বাবা? নামাজের তো দেরী আছে?
: ন্যাকা করিস? তোর না আজকে বিয়ে!
ভালোই
ভালোই রেডি হ নাহলে আমাকে জোর করতে
হবে।
: আচ্ছা এক্ষুনি যাচ্ছি।
বাবার মুখের উপর কিছু বলার সাহস হলো না।
ভদ্র
ছেলের মতো রেডি হয়ে রওনা হলাম।বাবা,
মা,
বড়ো ভাই আর আমি ছিলাম শুধু কারন শুধু
কালিমা হবে
তাই।নামাজ শেষে বিয়ের কর্মকাণ্ড শেষ
হলো।
গলায় দড়ি দিয়ে ফেললাম কিন্তু এখনো তার
কারনটা
জানতে পারলাম না।মানে নিজের বৌকে
এখনো
দেখি নাই।মোনাজাত এর পর আমাকে আর ঐ
মেয়ে মানে আমার বউকে আমার সাথে
বসিয়ে
দিলো।দেখে তো বাচ্চা মেয়ে মনে
হচ্ছিলো,মুখে আবার ঘোমটা দিছে কিছু
দেখতে
পাই না।বাবা দূরে দাঁড়িয়ে হাসছিলো,
বাবার হাসি দেখে
অন্তরে তির তির করছিলো।না পারছি কিছু
বলতে না
পারছি সাহস করে বউ এর দিকে তাকাতে।
হঠাৎ করে প্রকৃতির ডাক।কথায় আছে না,
যেখানে
বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।বসে আছি
লোকজন দেখছে,আমরা কি চিড়িয়া নাকি!!
দুইজন বাচ্চা
ছেলে মেয়ের নাকি বিয়ে হয়েছে এই
ভেবেই নাকি এত্তো মানুষ জন দেখতে
আসছে।যাই হোক দশ মিনিট পর আর পারলাম
না।মনে
অনেক সাহস নিয়ে পাশে বউ এর কানের
কাছে
মুখ নিয়ে গেলাম;
: এইযে শুনছেন?
: জ্বি,বলুন।(কৌতূহল মিশ্রিত বাক্যে)
: আমার না খুব জোরে বাথরুম পেয়েছে।
প্লিজ
হেপ্ল মি!
কথাটা শোনার পর মেয়েটা একটু জোরেই
হেসে ফেললো।হায়রে কেন যে বলতে
গেছিলাম নিজের উপর রাগ উঠলো।
সে হাসি থেমে প্রায় জোরেই বলে
উঠলো,আমাদের এত্তো দেখার কি আছে।
সবাই
চুপ হয়ে গেলো।বউ তার বাবাকে কাছে ডাক
দিয়ে ফিস ফিস করে কি যেন বললো।তার পর
উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকালো;
: আমার সাথে আসুন? (হাসি মুখে..)
: আচ্ছা।
: কি মানুষ আপনি বলুন তো। বিয়ের সময়
বাথরুম।
(আবার হাসি)
: কেন? বিয়ে করলে কি মানুষের বাথরুম পায়
না।
: তাই বলে এই সময়।এত্তো মানুষের সামনে।
নিন
এইযে বাথরুম।
ধন্যবাদ দেওয়ার সময় নাই।প্রায় দৌড়ে
ভিতরে
ঢুকলাম।বাহিরে অট্টহাসির শব্দ পাচ্ছিলাম।
যাই হোক
বাথরুম শেষ করে বাহিরে এসে দেখি বৌ
নাই।বাবা রাগি
মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
: কিরে? বাথরুম করার আর সময় পাইলি না?
বাসায় যে
একবার বাথরুম করে আসলি?
: আমি কি করবো,রাস্তায় আসার সময় পানি
খেয়েছিলাম তাইতো এখন চাপ দিলো।
: বিয়ে বাড়ির সবাই কি ভাবছে।
: যে যা ভাবুক আমার কি।একেতো জোর করে
বিয়ে দিচ্ছো, পালাইনি এখনো শুকরিয়া
করো।
যাই হোক আব্বার সাথে কথা কাটাকাটির
পর বাবার
পিছে পিছে গেলাম। বাবা বললো তারা
নাকি চায়
মেয়ে আজ আমাদের বাড়িতে যাক।
মেয়ের বাবা মা মানে শ্বশুর শ্বাশুড়ি আম্মা
তার
মেয়েকে নিয়ে আসলো।এইদিকে আবার
মেয়েকে বিদায় দেওয়ার সময় ছেলের হাতে
হাত দিয়ে অনেক কিছু প্রতিজ্ঞা করিয়ে
নেয়।
সেই প্রথা মতে যখন মেয়েটার মানে বৌ এর
হাত
আমার হাতে ধরিয়ে দিলো, ছোয়ার সাথে
সাথেই
মাথায় কেমন জানি করে উঠলো।অবিশ্বাস্য
ভাবে
আমি ঐখানে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।যখন
জ্ঞান
ফিরলো তখন বুঝতে পারলাম এই পুরোটাই
স্বপ্ন
ছিলো!
আফসোস একটাই রয়ে গেলো বউ এর
মুখখানা দেখতে পারলাম না।
0 Comments