আল কোরআনের আলোকে মহামানবের আগমন ও প্রত্যাগমন নবি,রাসুল,মহামানব,আউলিয়া কেরামের আগমন, প্রত্যাগমন এবং পূনরুত্থান এই (আলমে নাসুত, আলমে বরজখ, আলমে আরওয়াহ) তিন জগতেই তাদের উপর রহমত, বরকত,কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হয়। অথচ অধিকাংশ মানুষই সে সম্বন্ধে বেখবর বা গাফেল। মহামানবগন যখন দুনিয়াতে (আলমে নাসুতে) অবস্থান করে তখন অধিকাংশ মানুষ মনে করে তারা আমাদের মত এবং তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করে অথবা সমালোচনা বা ফতোয়া শুরু করে। মহামানবগন যখন দুনিয়া হতে চলে যায় (আলমে বরজখে) অবস্থান করে তখন অধিকাংশ মানুষ মনে করে তারা মরে পচে গলে গেছে এবং তারা মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করতে পারে না।
মহামানবগন যখন পূনরুত্থিত হয়ে আল্লাহর জাতে মিলিত হয়ে রুহের জগতে (আলমে আরওয়াহ) অবস্থান করে তখন অধিকাংশ মানুষ মনে করে, মরলে আমাদের যে অবস্থা হবে তাদেরও একই অবস্থা হবে। অথচ আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে- ওয়া সালামুন আলাইহি ইয়াউমা ওলিদা ওয়া ইয়াউমা ইয়ামূতু ওয়া ইয়াউমা ইয়্যুব'আসু হাইয়্যা। অর্থঃ এবং শান্তি তার উপর যে মুহুর্তে/যেদিন জন্মগ্রহণ করেছে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন পূনরুত্থিত হবে। (সূরা মরিয়ম,আয়াত-১৫) ওয়াস সাালামু আলাইয়্যা ইয়াউমা ওলিত্তু ওয়া ইয়াউমা আমূতু ওয়া ইয়াউমা উব'আসু হাইয়্যা।
অর্থঃ এবং শান্তি আমার প্রতি যে মুহুর্তে/যেদিন জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবো এবং যেদিন পূনরুত্থিত হবো। (সূরা মরিয়ম,আয়াত-৩৩) উপরোক্ত সূরা মরিয়মের ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ পাক সুবহান তার পবিত্র জবান মোবারকে হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের কথা বলেন। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম বৃদ্ধ বয়সে একজন পবিত্র সন্তানের লাভের জন্য রাব্বুল আলামিনের নিকটে আরজি/ প্রার্থনা পেশ করেন। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল করে রাব্বুল আলামিন উনার ওরসে হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামকে দুনিয়াতে পাঠানোর আগে
অথবা পাঠানোর মুহূর্তে সুসংবাদ প্রদান করে বলেন - শান্তি তার (ইয়াহইয়ার) উপর যে মুহুর্তে/যেদিন জন্মগ্রহণ করবে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন পূনরুত্থিত হবে। (সূরা মরিয়ম,আয়াত-১৫) সূরা মরিয়মের ১ থেকে ১৫ নং আয়াতে এই ঘটনার পূর্ণ বিবরণ রয়েছে।
রাব্বুল আলামিন পয়গম্বর ও মহামানব হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামকে দুনিয়াতে পাঠানোর আগে অথবা পাঠানোর মুহূর্তে সুসংবাদ দিয়ে জানিয়ে দিলেন- আমার প্রেরিত মহামানব হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের দুনিয়া ও আখিরাতে এমনকি পুনরুত্থানে কোন ভয় নেই, তার সকল অবস্থায় শান্তি বর্ষিত হয়। উপরোক্ত সূরা মরিয়মের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক সুবহান তার বাণীকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মুখ দিয়ে বলালেন- শান্তি আমার প্রতি যে মুহুর্তে/যেদিন জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবো এবং যেদিন পূনরুত্থিত হবো। (সূরা মরিয়ম,আয়াত-৩৩)। হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালামের গর্ভ মোবারক হতে যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে আগমন করলেন, তখন তাদের কওম তথা হযরত হারুন আলাইহিস সালামের কওমের লোকজন হতে চারদিকে তুমুল সমালোচনা ও ফতোয়ার ঝড় উঠল। যেমন- বাপ ছাড়া সন্তান হয় কি করে, এই সন্তান অবৈধ ইত্যাদি। হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম তাদের কওমের লোকজনকে বললেন-
তোমরা এই শিশু সন্তানের কাছে জেনে নাও। নবজাতক শিশু ঈসা (আঃ) এর জবান খুলে গেল। সে তার জন্মের বৃত্তান্ত বর্ননা করে অবশেষে বলেন- শান্তি আমার প্রতি যে মুহুর্তে/যেদিন জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবো এবং যেদিন পূনরুত্থিত হবো। (সূরা মরিয়ম,আয়াত-৩৩) শিশু ঈসা নবী মাজেযা প্রদর্শন করে মরিয়ম ও তার বৃত্তান্ত করেন যার বর্ণনা সূরা মরিয়মের ১৬ থেকে ৩৪ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যে কোন মহামানবের আগমন,ওফাত ও পরকাল জীবন রহমত,বরকত, কল্যাণময়। এই যদি হয় অন্যান্য নবীদের অবস্থা তাহলে আমাদের নবী আকাঁ ও মওলা আহমদ মোস্তফা মোহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের আগমন ও প্রত্যাগমন ও উত্থান আমাদের জন্য কেন শান্তি,রহমত, বরকত, নেয়ামত,কল্যানকর হবে না? সুতরাং প্রমাণ হলো নবীজির ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য শান্তি ও কল্যানকর।
0 Comments