Breaking News

মেঘ রোদ্দুর | সুহান মাইসা | পর্ব -৩

--" দে, বাকি এসাইনমেন্ট আমি করে দিচ্ছি।"
লিখা বন্ধ করে মৃত্তিকা বিরক্তি নিয়ে তাকালো তার পাশের সীটে বসে থাকা সুভাসের দিকে। সেই ক্লাসে আসার পর থেকেই এই ছেলে জ্বালিয়ে খাচ্ছে তাকে, একটু পর পর খালি সরি বলছে আর বক বক করেই চলছে। মৃত্তিকা আবার লিখতে শুরু করলো, লিখতে লিখতে বললো,
-- "না লাগবে না, প্রায়ই শেষ আমার। আর, একটু চুপ কর না! সেই কখন থেকেই তো মাথা খাচ্ছিস আমার।"
-- "তাহলে একবার বল না মাফ করে দিয়েছিস তুই আমাকে! "
-- "হ্যাঁ করেছি, এইবার খুশি?"
-- "রাগ করে নেই তো? "
-- "আরেকটা কথা বললে তোকে আমি খুন করে ছাড়বো। "
-- "যাক বাবা তুই নিজের আসল রুপে ফিরে এলি।" মৃত্তিকা আর কিছু বললো না।
মৃত্তিকা লিখছে আর সুভাস তার পাশে চুপ করে বসে তাকে মন ভরে দেখছে সেটা মৃত্তিকা বুঝতে পারলো না।
সুভাস মৃত্তিকাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।আজ সে হালকা গোলাপি রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়ে এসেছে, আর চুল গুলো এক সাইড করে ঝুটি করে আছে, উপরের ছোট চুল গুলো বাতাসের সাথে বার বার ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছে। সুভাসের হাত খুস খুস করছে নিজের হাত দিয়ে চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে।
--আসবো?
এই শব্দ কানে আসতেই সুভাসের মেজাজ চরম পর্যায়ে চলে গেল। যখনই মৃত্তিকার সাথে আলাদা সময় কাটানোর চেষ্টা করে তখনই এই সামুয়েল নামের ছেলেটা তাদের মাঝখানে আসবেই। এতদিন বুঝেনি কেন সে এমন করতো কিন্তু আজ ঠিক বুঝতে পারছে।এই মুহুর্তে এই ছেলেকে সহ্য করা সুভাসের পক্ষে একদম সম্ভব না তাই টেবিলে রাখা নিজের খাতা আর কলমটা হাতে নিয়ে বসা থেকে উঠতে উঠতে মৃত্তিকাকে বললো,
-- তুই এসাইনমেন্ট শেষ কর, আমি আসছি। পরে দেখা হবে।
মৃত্তিকা অপ্রস্তুত ভাবে সুভাসের হাত ধরে বললো,
-- কোথায় যাচ্ছিস? সামুয়েলকে আমি ডেকেছি।
সুভাস অভাক হয়ে তাকিয়ে আছে মৃত্তিকার দিকে।
-- "আসলে আমি কিছু কথা ক্লিয়ার করতে তোদের দুজনকে ডাকলাম। "
এই কথা বলেই মৃত্তিকা সামুয়েলের দিকে তাকালো। সামুয়েল একটু এগিয়ে এসে বললো,
-- "বল, কেন ডেকেছিস?"
সুভাস একটু দূরে করে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।
-- "সুভাস, আমি চাইনা আমাদের ৫ জনের মধ্যে কেউ কারো সাথে রাগ করে কথা না বলে থাকুক। তুই তোর মনের কথা যেমন আমাকে জানিয়েছিস ঠিক সামুয়েলও তা করেছে। আমি এইখানে কারোর দোষ দেখছি না। তাহলে তুই কেন সামুয়েলের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করবি? "
-- "কারন সামুয়েল জানতো যে আমি তোকে ভালবাসি। কিন্তু সে আমাকে কখনোই বলেনি যে, সে তোকে ভালবাসে। জানলে হয়তো আমি দূরে সরে যেতাম। "
-- "যা হয়েছে ভুলে যা, আমিও ভুলে গেছি। মনে কর যে তোরা আমাকে ভালই বাসিসনি। কিছুই হয়নি আমাদের মাঝে। ঠিক আছে?"
সামুয়েল মৃত্তিকার কথায় হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলালো কিন্তু সুভাস কিছু না বলেই ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল। পিছন দিয়ে মৃত্তিকা অনেক বার ডাকার পরেও ফিরে তাকায়নি। মৃত্তিকাকে ভালবাসে সে। এটা সে কখনোই মন থেকে মুছতে পারবে না।
সুভাসের ঘুম ভাঙলো তার মায়ের ডাকে।
-- "কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি তোকে? উঠার কোনো নামই নেই, সেই কবে ভার্সিটি থেকে এসে ঘুমিয়েছিস কিছু খাওয়ার কি প্রয়োজন নেয়?"
কটা বাজে দেখতে চশমা খুজতে লাগলো সুভাস, হাতড়ে চশমাটা নিয়ে চোখে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো, ৭.২৫ টা। ২.৩০ টায় বাসায় এসে ঘুমিয়েছিল সে, তার মানে প্রায় ৫ ঘন্টা। পেটে ক্ষুধা অনুভব করতেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো।
খাবার খেয়ে এসে গিটার নিয়ে ছাদে গেলো। ছাদের এক কোনায় অনেক রকম গাছ লাগানো আছে। সে জায়গায় গিয়ে বসলো। এইটা তার সব চেয়ে প্রিয় কাজ। গিটার নিয়ে ছাদে গিয়ে গিটার বাজিয়ে গান গাওয়া আর গাইতে গাইতে তার সব চেয়ে প্রিয় কেউকে মনে করা। যখন থেকে মৃত্তিকার প্রেমে পড়েছে তখন থেকে প্রিয় কেউকে বলতে তাকেই মনে করে সে। আজও তাই করছে, গিটার বাজানো শুরু করে চোখ বন্ধ করে মৃত্তিকাকে ভাবতে লাগলো।
মেয়েটা শ্যামলা হলেও তার চেহারায় অন্যরকম একটা মাধুর্য আছে যা যেকোনো কেউকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। আর যখন হাসে তখন চেহারায় স্নিগ্ধতা ভেসে উঠে। আর চোখের পাপড়ি গুলো বড় হওয়াতে চোখ গুলো ছোট হয়ে আসে, গাল গুলো লাল হয়ে যায়। হাসলেও যে কারো গাল লাল হয়ে যায় তা মৃত্তিকাকে না দেখলে জানতেই পারতো না।
-- "এই যে ফুলের সুভাস, বিকেলে কোথায় ছিলে?"
এই কথা কানে আসতেই চিন্তার জগৎ থেকে ফিরে আসলো সুভাস। গিটার বাজানো বন্ধ করে পাশের বিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালো।
-- "এই মেয়ে, এই সময় এইখানে কি করছো তুমি? পড়াশোনা নেই?"
সুভাস ধমক দিয়ে বলতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
--" বাহ রে! নিজে যে গান গেয়ে মানুষের পড়ায় ডিস্টার্ব করছো! "
--" আমার গান গাওয়াতে তোমার ডিস্টার্ব হচ্ছে? আরেহ... বড্ড ফাকিবাজ মেয়ে তো তুমি। "
--" তো কি? আমি কি এই সময় ছাদে এমনি এমনি এসেছি নাকি? তোমার গান শুনে পড়তে পারছিলাম না বলেই তো এলাম "
--" আমি গান গাওয়া শুরু করলাম দু মিনিট ও হলো না এর মধ্যে তোমার ডিস্টার্ব হয়ে গেলো? যে মেয়ের নাক টিপলে এখনো দুধ পড়ে সে মেয়ে এত মিথ্যা বলতে জানে? "
--" উফফ.. সব সময় এমন ছোট ছোট করবে না তো? আমি এখন বেশ বড় হয়েছি, ক্লাস টেনে পড়ি। কিছুদিন পর কলেজে উঠবো, তারপর তোমার ভার্সিটিতে। তখন তোমাকেও প্রতিদিন দেখতে পাবো। আর তুমি জানো? পাড়ার প্রায় ছেলেই আমার জন্য পাগল। আর তুমি কিনা বলছো আমি ছোট?
এই মেয়ের মতিগতি মোটেও ঠিক লাগছে না সুভাসের, তাই কিছু না বলেই গিটার হাতে নিয়ে নিচে নেমে গেল।
যখনই সে ছাদে উঠবে তখনই এই মেয়ে এসে হাজির হবে। আর এক একটা পাকনা পাকনা কথা বলবে। মা বাবা বেশি প্রশ্রয় দিয়েই এমন বানিয়েছে মেয়েকে। শান্তিতে একটু গানও গাইতে দিলো না। আর কি যেন বললো? কিছুদিন পর আমার ভার্সিটিতে পড়বে আর প্রতিদিন আমাকে দেখবে। কোথাও একটু শান্তিতে থাকতে পারে না সে। নিজে নিজে বিড়বিড় করতে করতে নিচে নেমে এলো সুভাস।
চলবে...

Post a Comment

0 Comments