Breaking News

মেঘ রোদ্দুর | সুহান মাইসা

--"কি সমস্যা তোর?"
খুব পরিচিত এই কন্ঠ কানে আসতেই সুভাস বুঝতে পারলো সে কে, তারপরেও জেদ করে না তাকিয়ে সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
--সুভাস আমি তোর সাথে কথা বলছি।
এই কথা শুনে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো, ধবধবে সাদা কাপড় পড়া মেয়েটি দুহাত বুকে দিয়ে তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
সাদা কাপড়ে তাকে কি যে মায়াবী লাগছে তা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে
-- দুদিন ধরে ভার্সিটিতে এলিনা কেন?
একথা শুনতেই সুভাসের ধ্যান ভাঙলো, আবার চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালো। মৃত্তিকা এসে সুভাসের পাশে বসে বলল-
-- পালিয়ে বেড়াচ্ছিস আমার কাছ থেকে?
--না
--তবে?
--কিছু না।
এই উত্তরে মৃত্তিকার মন খারাপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার শান্ত গলায় বললো-
-- দুদিন ক্লাসে এলি না আবার কালকে এসেও আমার সাথে কথা না বলেই চলে গেলি। কি করেছি আমি?
সামান্য হেসে সুভাস মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে বললো, আমাকে কি প্রয়োজন তোর? সামুয়েল আছে না!
-- সামুয়েল আছে মানে? তোর প্রয়োজনের সাথে সামুয়েলের কি সম্পর্ক?
--মৃত্তিকা, ক্লাসের সবাই বুঝে শুধু তুই বুঝিস না তাই না? নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকিস?
মৃত্তিকার কথাটি বুঝতে একটু সময় লাগলো। নিমিষেই মনটা বিষন্নতাই ভরে গেলো। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুভাস বলে উঠলো, --এখন আবার বলিস না যে আমি তোকে কি বুঝাতে চাইছি।
-- তার মানে তুইও সামুয়েলের মতো....
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সুভাস বলতে শুরু করলো,
-- "হ্যাঁ ভালবাসি তোকে, ভেবেছিলাম তুইও আমাকে ভালবাসিস কিন্তু তুই তো সামুয়েলকে ভালবাসিস, আর সামুয়েল? সে ভালো করেই জানতো যে আমি তোকে কতটা ভালোবাসি। ইচ্ছে করেই এমন করেছে সে। শেষ করে দিল সে সব কিছু।সেদিন সে আমার সামনে তোকে প্রপোজ করে বসলো। আর তুই? "
মৃত্তিকার চোখ ভরে এলো। কিছু না বলেই উঠে চলে আসতে যাবে তার আগেই সুভাস তার হাত ধরে বললো,
--" তুইও যদি সত্যি সামুয়েলকে ভালবাসিস তবে তোকে প্রমিস করছি, তোদের থেকে অনেক দূরে চলে যাব। আর কখনোই তোদের সামনে আসবো না।
--" কেউকেই ভালোবাসি না আমি।"
এই বলে সুভাসের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে চলে যাই সে। মৃত্তিকা কাউকে ভালোবাসতে চাইনা। তার মনে হয় যে সে যাকেই ভালোবাসে সে তাকে ছেড়ে চলে যাই। বাবা, মা, নানুমনি তাদের কেই তো সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো। এখন ওরাই তাকে ফেলে চলে গেলো। আর কাউকে হারাতে চাইনা সে।
মৃত্তিকা আর ক্লাস করলো না। সোজা বাসাই চলে এল। দরজার সামনে দাড়িয়ে চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে কলিং বেল চাপলো। একটু পরে তার মামি দরজা খুলে দিল।
ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই শুরু হয়ে গেল প্রতিদিনের এক সুরে বলা ভাষন। তার মামির বড় গলায় বলা কথা গুলো তার কানে ঢুকছে না। চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেল। ব্যাগ রেখে ব্যালকনি থেকে তাওয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে ঝর্নার নিজের অনেক্ষন বসে রইল। আর ভাবতে লাগলো সুভাসের বলা কথা গুলো। কিছুদিন আগেও মিষ্টি তাকে বলেছিল সুভাস তাকে পছন্দ করে কিন্তু সে বেশি একটা গুরুত্ব দেইনি তাতে। তারও মনে হয়েছিল যে সুভাস তাকে পছন্দ করে তাই সুভাসকে আরও বেশি করে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল তার পক্ষে কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো কখনোই সম্ভব না কিন্তু আজ কি থেকে কি হয়ে গেল? আর সামুয়েল? সে কি করলো? কখনো চিন্তাও করেনি সামুয়েল তাকে এইভাবে প্রপোজ করে বসবে। এতদিন ধরে যেটা সন্দেহ করেছিল সেটাই হয়েছে সেদিন। সামুয়েল সুভাসকে হিংসা করতো। সামুয়েলের হাবভাবে তাই মনে হতো কিন্তু এখন পুরাপুরি নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু কেন? সামুয়েল কেন সুভাসের প্রতি এতো রাগ? সামুয়েল তাকে ভালোবাসে না সেটা সেদিনই বুঝে গিয়েছিল যেদিন সামুয়েল তাকে প্রপোজ করা দেখে সুভাস ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সামুয়েলের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখেছিল। যদিও সে সাথে সাথে সামুয়েলকে বলে দিয়েছিল যে তার পক্ষে কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো কখনও সম্ভব না আর সামুয়েলকে সে সবসময় একজন ভাল বন্ধ হিসেবে দেখেছে, তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক কখনোই সম্ভব না। তাতে সামুয়েল কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। সামুয়েলকে না করার ব্যাপারটি সুভাস দেখেনি তার আগেই সে ক্লাস থেকে বের হয়ে গিয়েছিল, তাই দুদিন ধরে এমন আচরণ করছে সুভাস। দুয়ে দুয়ে পাঁচ মিলাতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না মৃত্তিকার। কিন্তু সামুয়েলের কিসের এতো হিংসা সুভাসের সাথে? হিংসা নাকি অন্য কিছু?
গোসল করে বের হতেই খুদা অনুভব করলো তারপরে মনে পড়লো যে, সে তো সকালেও কিছু খাইনি। এ বাড়িতে কারো কিছু যায়ে আসে না সে কিছু খেয়েছে কিনা। কেউ নেই এইখানে যার সাথে সে আবদার করতে পারবে, অভিমান করতে পারবে। যাক কিছু করার নেই, এইসব তাকে মেনে নিতে হবে। সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে খেতে যাওয়ার পর পরই তার মামি বলতে শুরু করলো,
-" আসেন মহারানি, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম, কটা গিলে আমাকে উদ্ধার করেন। কোনো কাজ কাম তো নাই। সব কাজ তো আবার আমার একার করা লাগে"
খেতে বসার আগেই এমন কয়েকটা কথা শুনা অভ্যাস হয়ে গেছে মৃত্তিকার।
চলবে..

Post a Comment

0 Comments